এশিয়ার ভূগোল পাল্টাতে বাংলাদেশকে পাশে টানার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাস্ট্রের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আকসা ও জিসোমিয়া নামের দুটি চুক্তি সই করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
আকসার (অ্যাকুজিশান অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট) অধীনে মার্কিন বাহিনী খাদ্য, জ্বালানি, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি বিনিময় হয়ে থাকে। জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট) চুক্তির অধীনে হয় সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময়।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিকসহ নানা কারণে গত বছরগুলোয় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবেই চায় যে বাংলাদেশ চীনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসুক।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক রণকৌশল এবং কোয়াড সংগঠন চীনের প্রভাবকে সীমিত করার লক্ষ্যেই সৃষ্ট। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শেষ সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশ এই রণকৌশলে যুক্ত হোক। বাইডেন আমলেও একই চাওয়া।
চীনের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে,যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া কিছুটাও মেটে নি , ভারতে প্রতিটি ক্ষেত্রে চীনের কাছে মার খেয়েছে। অরুনাচলের কিছুঅংশ চীন দখল করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তা হয়তো বদলাচ্ছে ,ভারত কে নিয়ে যুক্তরাস্ট্রের অনেক সমস্যা।
ভারত আস্থার যায়গা তৈরি করতে পারে নি ,চীনের সঠিক প্রতিপক্ষ হিসাবে। তাছাড়া মোদিকে আমেরিকায় আমন্ত্রন করে, বাইডেন অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে অনেক সমস্যায় পরেছে। মানবাধিকার ইস্যুতে,অনেক কংগ্রেস ম্যান অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। তাছাড়া মনিপুরের ইম্ফলে ঘাটি চেয়েও ভারতের কাছে পায়নি আমেরিকা ,যা দিয়ে মায়ানমারে নো ফ্লাইজোন ঘোষনা করতে চেয়েছিল আমেরিকা ,যা চীনের ওপরেও চাপ সৃষ্টি করতো।
মনিপুরের আজ যে সিভিলি ওয়ার ছড়িয়ে পরেছে,তার পিছনে অনেকই যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে বলে মনে করে।হয়তো যুক্তরাস্ট্র চাইছে পূর্ব তিমুরের মত মনিপুরেও একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক।
বাংলাদেশ চীনবিরোধী একটি জোটে শরিক হতে আগ্রহী হয়নি। আবার,দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের অযৌক্তিক দাবির বিষয়েও বাংলাদেশ বরাবর নীরব থেকেছে। অন্যদিকে গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ যে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করেছে, তার সঙ্গে মার্কিন রণকৌশল সাংঘর্ষিক নয়।
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক জাপান সফর শেষে ২৬ এপ্রিল ঘোষিত যৌথ ইশতেহারেও তার প্রতিফলন আছে। এতে সমুদ্রসীমার বিষয়ে বাংলাদেশ আনক্লসের সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে, যা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের দাবির বিরুদ্ধে যায়।
উভয় পক্ষের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষার যে প্রয়াস বাংলাদেশ করে আসছে, এতে তাই প্রতিফলিত হয়েছে।যা বাংলাদেশের করা উচিৎ। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টতই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও বেশি অনেক সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। যার মধ্য অন্যতম ,কক্সবাজারে বিমান ঘাটি। যা দিয়ে মায়ানমারে নো ফ্লাইজোন ঘোষনা করা যাবে ,আর এসবের পিছনের আসল কারন হবে,দক্ষিন এশিয়ার দিক থেকে চীন কে ঘিরে ফেলা।
চীনকে মায়ানমারের সিভিল ওয়ারে প্রত্যক্ষ ভাবে টেনে আনা,যা ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকা সফল হয়েছে।
নেপাল ইতিমধ্যেই ভারতকে ছেড়ে চীনের সাথে চলে গিয়েছে,ভারতের মিত্র বলতে প্রতিবেশী রাস্ট্রের মাঝে একমাত্র বাংলদেশেই আছে। ভারতও কোন ভাবেই চাচ্ছে না বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাস্ট্রের সামরিক চুক্তি হোক। এ ক্ষেত্রে ভারত আর চীনের চাওয়া অনেকটা এক।
এ অবস্থায় কিভাবে বাংলাদেশে,চীন আর আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিকের ক্ষমতার লড়াইয়ে ভারসাম্যে রক্ষা করবে সেটা বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
What's Your Reaction?






