কোনো সম্পর্কিত খবর পাওয়া যায়নি

সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কাকে ব্রিটিশরা বলত ‘জুয়েল অব দ্য ক্রাউন’। তাদের রাজত্বে এত সমৃদ্ধ ছিল দ্বীপটি! লঙ্কার সেই ‘শ্রী’ এখন উধাও। ইদানীং ওই দেশ থেকে সংবাদ আসে, ‘তেল কেনার লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দুজনের মৃত্যু’, ‘কাগজের অভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারল না’, ‘৭৫ বছরে এত দুর্দশা দেখেনি লঙ্কাবাসী’, ‘পেট্রলপাম্পে সৈন্য মোতায়েন’ ইত্যাদি।
প্রতিবেশীর ঘর জ্বলছে । আমরা কোন ভাবেই তার তাপ উপভোগ করতে পারি না বরং পারি সতর্কতা অবলম্বন করতে । শ্রীলংকার এমন অবস্থার জন্য জনগন প্রেসিডেন্ট গোতাবয়ে পরিবারবাদকে দায়ি করে শ্লোগান দিচ্ছে ।
শ্রীলংকার সরকার এবং বিরোধী সবাই হয়তো দায়ী কিন্তু রাজনীতিবীদদের পুরনো নীতি ,যখন সফলতা আসবে সবাই ভাগিদার হতে চাইবে আর খারাপ সময়ে একে অন্যর দিকে আঙুল তুলবে ।দেশটির সব মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন তাদের জায়গায় নতুনরা শপথ নিয়েছেন ।শেয়ার বাজার পতন হওয়ার কারনে ,বন্ধ করে দিতে হয়েছে ।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। কয়েক দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চাইছেন। কিন্তু গোতাবায়া পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন । এদিকে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছেন চিকিৎসকেরা। শ্রীলঙ্কার সরকারের শীর্ষ পদগুলোতে রয়েছেন গোতাবায়ার পরিবারের সদস্যরা। তিনি ২০১৯ সাল থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংকটে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে খাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্ষুব্ধ শ্রীলঙ্কানরা চলমান সংকট নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।এদিকে বিক্ষোভ দমন করতে গত সপ্তাহে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল গোতাবায়ার সরকার।
কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার ৪২ আইনপ্রণেতা সরকারি জোট ছেড়ে দেওয়ার গোতাবায়ার সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।মুদ্রাস্ফীতি এমন জায়গায় এসেছে যে
১ ডলারে শ্রীলংকার ৫০০ টাকা হয়েছে ।এমনকি রাস্তার সড়ক বাতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিদুৎ সংকটের কারনে ।নাই হাসপাতালের সেবা ,নাই দরকারি মেডিসিন এবং খাদ্য সামগ্রী ।
এখন অনেকেই শ্রীলংকার এমন অবস্থার কারন বের করার চেস্টা করছেন । কিন্তু কারন অনেকটা এক কথায় তার উত্তর আপনি পাবেন না ।২০১৮ তে শ্রীলংকা একটা টপ দেশ ছিলো টুরিস্টদের জন্য ।২০১৮ তে ২.৩ মিলিয়ন মানুষ শ্রীলংকা ঘুরতে যায় ।শ্রীলংকার জিডিপির যা ১৩ শতাংশ ছিলো ।কিন্তু ২০১৯ এর এপ্রিলে শ্রীলংকায় বিভিন্ন জায়গায় বোম ব্লাস্ট হয় যাতে ২১৬ জন মারা যার যার ৪৬ জন বিদেশী । এই বোমা হামলা টুরিজ্যম একটা ধাক্কা দেয় ।
স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে এর জন্য দায়ী করা হয় ।
২০১৮ মুসলিম আর বুদিস্ট উগ্রপন্থীদের দাঙ্গা হয় ,অনেক মুসলিম মারা যায় ,অনেকের ঘর বাড়ি পুড়ে যায় ।সরকারকে কারফিউ দিতে হয় এবং সেনা মোতায়েন করতে হয় ,পরিস্থিতি কন্ট্রোল করার জন্য ফেইসবুক বন্ধ করে দেয়া হয়ে ,পরে দেখা গিয়েছে ,যখন ফেইসবুক পেপারস লিক হয় ,এই কমিউনাল দাঙ্গা ছড়াতে ফেইসবুক সাহায্যা করেছিলো । ফেইসবুক পরে এর জন্য মাফ চেয়েছিলো।
এরপর আসে কোভিড যা শ্রীলংকান টুরিজ্যাম ব্যবসাকে পুরোপুরি শেষ করে দেয় ।
এর পরের ভুল শ্রীংলংকার সরকারের , দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ইলেকশন ওয়াদা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভ্যাট কম করে দেয় ফলে জিডিপি কমে যায় দেশের ,মানুষ ব্যায় বেশী করতে থাকে
আমাদানি করা জিনিসপত্র ।
গোতাবায়া এগ্রিকালচার কে অর্গানিক বানানো সিদ্ধান্ত নেন ,এটাও ইলেকশন ওয়াদায় ছিলো,একরাতের মাঝে শ্রীলংকায় সিনথেটিক সার এবং কীটনাশক নিষিদ্ধ করেন যা কফিনে শেষ পেড়েকে হিসেবে ঢুকে । উৎপাদন কমে যায় এবং যে শ্রীলঙ্কা চালে স্বয়ংভর ছিলো তাকে চাল আমদানি করতে হয় এবং তারা যে চাল
রপ্তানি করে দেশে বিদেশী মুদ্রা আনতো তাও বন্ধ হয়ে যায় ।
উৎপাদন কমে যাওয়ায় গ্রামের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে এবং খাদ্য আমদানি করার জন্য আরো বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার জন্য সবচেয়ে চাপের সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো- এর বিশাল বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিষেবার বোঝা, বিশেষ করে চীনের প্রতি।
চীনের কাছ থেকে ইতিমধ্যে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ঋণ নেয় শ্রীলঙ্কা। গত বছর তীব্র আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে।
এই লোনের টাকায় যে প্রজেক্ট করা হয়েছে তা থেকে এমন কোন লাভ আসে নি যা দিয়ে লোন পরিশোধ করা যায় ।বাধ্য হয়ে শ্রীলংকা তাদের হাম্বানটোটা বন্দর লীজ দিয়ে দিয়েছে আর এই লীজ নিয়েছে চীনের এক কোম্পানি ।অনেকে একে দেশ বিক্রির সাথে তুলনা করেছেন ।
শ্রীলংকার এই অবস্থায় আমাদের মত দেশের হয়তো খুব বেশী কিছু করার নাই ,শিক্ষা নেওয়া ছাড়া ।