এক নজরে বঙ্গবন্ধুর জীবনী

ইতিহাস-ঐতিহ্য

এক নজরে বঙ্গবন্ধুর জীবনী

নুসরাত মালিহা
০৪,ফেব্রুয়ারি,২০২৩ ০৬:৩১ AM

বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বেই পৃথিবীর ইতিহাসে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয় তার নাম বাংলাদেশে।
স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সাহেরা খাতুন।তার পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে স্কুল জীবন শেষ করে ১৯৪৪ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এ. এবং ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।

শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে।তিনি গোপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এবং মহকুমা মুসলিম লীগের ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন।১৯৪৩ সালে তিনি প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘রাষ্ট্রভাষা-২১ দফা ইশতেহার- ঐতিহাসিক দলিল’ নামক একটি পুস্তিকা প্রণয়ন করা হয়। ওই ইশতেহারে ২১ দফা দাবির দ্বিতীয় দাবিটি ছিল রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত। এই পুস্তক প্রণয়নে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য এবং তিনি ছিলেন এটির অন্যতম স্বাক্ষরকারী।১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত ছাত্রলীগের ১০ দফা দাবি ছিল। এই দাবির মধ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবি ছিল অন্যতম।

বঙ্গবন্ধু ১৯৫০ সালে গ্রেফতার হন।ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি কারাগারে ছিলেন,বন্দি থাকা সত্ত্বেও তিনি ছাত্র নেতাদের দিকনির্দেশনা দিতেন।১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু বৈষম্য দূরীকরণ ও সায়ত্তশাসনের জন্য ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এই কর্মসূচিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। এই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন গড়ে উঠে যা উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিতি পায়।এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধি প্রদান করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৬৯ টির মধ্যে ১৬৭ টি আসন জয় করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে থাকে।১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর 'অপারেশন সার্চলাইট' নামক নির্মম গণহত্যা চালায়।বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে রাত ১২ টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং ওয়্যারলেসযোগে তা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেন।বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা শোনামাত্রই সাধারণ জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।রচিত হয় বাঙ্গালি জাতির শ্রেষ্ঠ বীরত্বগাঁথা।

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যার্বতন করেন এবং শক্ত হাতে যুদ্ধবিধস্ত দেশের হাল ধরেন।১৯৭২ সালের ২৩ শে মার্চ তিনি বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন।

শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনের প্রায় ১৩ বছর কারাগারে ছিলেন।তাঁর সমগ্র জীবনজুড়ে তিনি দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন।
১৯৩৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো বোন বেগম ফজিলাতুন্নেছার সাথে বিবাহ হয়।তাদের ঘরে শেখ হাসিনা,শেখ রেহানা নামে দুই কন্যা এবং শেখ কামাল,শেখ জামাল,শেখ রাসেল নামে তিন পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে তার ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে স্বাধীনতাবিরোধী কিছু ঘাতক সেনার হাতে নৃশংসভাবে নিহত হন।কেবলমাত্র তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।ঘাতকের বুলেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথিকৃৎ চিরতরে ম্লান হয়ে যায়।

বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির অকুতোভয় অগ্রদূত।বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।