"মেয়র পদে সাদিক মনোনয়ন না পেলে আমাদের দুজনেরই রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে ", সেদিন মনোনয়ন বোর্ডে বলেছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ

Apr 17, 2023 - 19:56
 0  229
"মেয়র পদে সাদিক মনোনয়ন না পেলে আমাদের দুজনেরই রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে ", সেদিন মনোনয়ন বোর্ডে বলেছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ

বরিশালের মেয়র পদের জন্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ তার ছেলে ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে মনোনীত করতে শেখ হাসিনার কাছে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাতে কোন সাড়া দেয়নি।

সূত্র জানায়, এসময় আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এও বলেন, 'মেয়র পদের টিকিট না পেলে সাদিকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে, সাথে আমার নিজের ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে যাবে।'

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের নাম বৈঠকে রাখার পর হাসনাতের ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে সমর্থন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় বোর্ডের বাকি সদস্যরাও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন।

ছেলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আবুল হাসনাত বলেন, সাদিক আবদুল্লাহ বর্তমান মেয়র এবং শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন এটি তিনি করবেন না। এসময় বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক তার জন্য বা হাসনাতের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবেন না বলেও জানান তিনি, বলেন সভায় থাকা একাধিক সূত্র।

এসময় ছেলেকে বাছাই করা না হলে তাকেও সবকিছু থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলেন হাসনাত। তিনিও আর রাজনীতিতে থাকবেন না বলে জানান।

সূত্র জানায়, এক পর্যায়ে হাসনাত অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে ডেকে পাঠান। চিকিৎসক হাসনাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান তার শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনক নয়।

বিরতির পর হাসনাত তার ছেলেকে মেয়র পদে এবং খায়েরকে বরিশাল-১ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খায়েরকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হবে এবং সময় হলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড বরিশাল-১ আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে, বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। 

এর আগে চাচা ভাতিজার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতেন চাচা। বরিশালের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

সাদিক আবদুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ এবার মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন।

গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা।

বিভিন্ন মাধ্যম জানা গেছে, পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নিভৃতচারী পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী খোকন সেরনিয়াবাতের দলে কোনো পদ-পদবি নেই। 

 এ নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে বরিশাল বাসীর মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লিখেছেন অবশেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তি আবার কেউ কেউ পুরো নগর জুড়ে মিষ্টি বিতরণের ঘোষণা দিয়েছেন।

মেয়র থাকাকালীন সাদিক আবদুল্লাহর উশৃংখল জীবন এর পিছনে দায়ি বলে মনে করছেন তারা।

বরিশাল মেয়র ও বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর সাদিক আবদুল্লাহ লঞ্চ, স্পিডবোট ও বাস টার্মিনাল দখলের জন্য বদনাম কুড়িয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

২০২১ সালের আগস্টে এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়িতে হামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। এছাড়াও স্থানীয়রা বলছেন, দলের সিনিয়র নেতাদের অসম্মান ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অনেক অভিযোগও আছে সাদিকের বিরুদ্ধে।

তার মেয়াদকালে তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি করেন যা নগরবাসীকে ক্ষুব্ধ করে। এছাড়া ভবনের নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া তিনি দীর্ঘায়িত করেছিলেন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় সমর্থন পেতে মনোনয়নপত্র আরো সংগ্রহ করেন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা।

গত ৩ এপ্রিল ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow