বাংলাদেশ কি জোট নিরপেক্ষ অবস্থান পরিত্যাগ করছে!

May 9, 2023 - 15:34
 0  75
বাংলাদেশ কি জোট নিরপেক্ষ অবস্থান পরিত্যাগ করছে!

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৫ দিনের সফর শেষে ঢাকার পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ফ্লাইটটি অবতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই দেশগুলো কোয়াডোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফর কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে?

ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান সহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যত মিত্র দেশ আছে তারা সবাই মিলে এই অঞ্চলে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির অংশ হিসেবে  একটি চীন-বিরোধী জোট গঠন করতে চায়। এই জোটের অনেক ধরণের লক্ষ্য আছে যার মধ্যে অন্যতম সামরিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং কূটনৈতিক। তবে সবকিছুর উপরে মূল লক্ষ্য একটাই আর সেটা হচ্ছে চীন যেন কোন ভাবেই যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের এক নম্বর ক্ষমতাধর দেশের অবস্থান থেকে সরিয়ে ,চীন যাতে সেই অবস্থান দখল না করতে পারে।

এই দুই বিশ্ব পরাশক্তির দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ এখন ভৌগোলিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে সমুদ্র সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলে বিজনেস হাব হবার সকল পথই খোলা আছে। এর পিছনে রয়েছো বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং এছাড়া এত বিপুল একটা জন সংখ্যার দেশ যার ক্রয় ক্ষমতা বসড়েছে সেই হিসাবে একটা বড় বাজার।

চীনের যেমন বড় বাজার আছে তেমনি,জাপানের বড় গাড়ির বাজার ,পশ্চিমাদের ও বড় বাজার আছে যেমন বাটা,বেনসন এমন আরো অনেক। এসব ছাপিয়ে ভৌগোলিক অবস্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। যেমন বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগস্থলে।

এছাড়া বাংলাদেশ যে বিশাল জলসীমা র‍য়েছে সেখানেও প্রচুর সম্পদ আছে। বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব যেভাবে বাড়ছিল, সেটি নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতে। বাংলাদেশে চীন-মার্কিন দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় একটি উদাহরণ সম্ভবত দেশটির একটি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প। চীন তার বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ মহা-পরিকল্পনায় যে মেরিটাইম সিল্ক-রুট প্রকল্প নিয়েছে, তার অংশ হতে পারতো বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত একটি গভীর সমুদ্র বন্দর। চীনকে ঠেকানোর জন্য, চীন যেন বঙ্গোপসাগর দিয়ে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য না করতে পারে, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং ভারত সক্রিয় হয়ে উঠেছিল যেন কোনভাবেই বাংলাদেশ বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভে ঢুকতে না পারে। তারা তা অনেকটাই সফল হয়েছে।

কক্সবাজার উপকূলে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য,চীন বেশ আগ্রহের সঙ্গেই বাংলাদেশের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু তখন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং ভারত সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করে এই পরিকল্পনা বাদ দিতে। তারা উল্টো প্রস্তাব দেয় সোনাদিয়া হতে অল্প দূরত্বে মাতারবাড়িতে জাপানের সহায়তায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য। জাপানের কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তায় মাতারবাড়িতে এই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ এখন দ্রুত গতিতে চলছে।আরোও একটাই কারন বাংলাদেশে জাপানের উপস্থিতি।

এছাড়া সমুদ্রে অগভীর গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যে ঠিকাদারি আমেরিকান কম্পানিকে দেওয়া হয়েছে,বিভিন্ন পত্র,পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে তাহলে কি বাংলাদেশ তার জোট  নিরপেক্ষ নীতি থেকে সরে আসছে।

এমনটা হয়তো অনেকে মনে করছেন আবার করছেন না। তবে,বৃহৎ শক্তির এমন,দলাদলির মধ্য পরে যেমন সুবিধা আদায় করা যায়,আবার ক্ষতিও হয়। যেমন মাতার বাড়ি প্রকল্পে বাংলাদেশে ,জাপান যে টাকা বিনিয়োগ করছে,  তা বৃহৎ শক্তির দলাদলির কারনে এটা স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে নিজের স্বার্থ রক্ষা করা এবং এবং সেই সাথে বৃহৎ শক্তি গুলোর মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখা বাংলাদেশের সামনে বেশ বড় কূটনীতিক চ্যালেঞ্জ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

বায়েজিদ খান Love to read, write and travel.....