তদন্ত কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত জিয়া-মোশতাকের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে: ড. মুহাম্মদ সামাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত জিয়াউর রহমান এবং খন্দকার মোশতাকের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত ‘খুনী মোশতাক ও জিয়ার অবৈধ সরকারের কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স: পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন এক কালো আইন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) মফিজুল হক সরকার, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বক্তব্য রাখেন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সঞ্চালনা করেন।
ড. মুহাম্মদ সামাদ আরো বলেন, সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের জারি করা ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি’ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ফলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যে বাঁধা ছিল তা অপসারিত হয়। কিন্তু হত্যাকারীদের বিচার যেন না হয় সেজন্যে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাশ করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের জন্য দায়মুক্তি অধ্যাদেশসহ ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত চার বছরের সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, আদেশ, ও ফরমানকে বৈধতা দেয়। ভবিষ্যতে কেউ যাতে ১৫ অগাস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারে, সে ব্যবস্থাটিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করে। নিঃসন্দেহে এই অধ্যাদেশটি ছিল আইনের শাসন বিরোধী নজিরবিহীন এক কালো আইন।
তিনি আরো বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে আবার রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেশবিরোধী অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার জন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাস্টামাইন্ড খুনী জিয়া-মোশতাক চক্রের অবৈধ ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বা দায়মুক্তি অধ্যাদেশ কি এবং কখন জারি হয়েছিল সেটা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। খুনী মোশতাক ও জিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধকে বানচাল করার মাধ্যমে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছিলেন এবং পাকিস্তানের সাথে আপোষ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, নানা তথ্য-উপাত্তের মধ্য দিয়ে এটি আজ প্রামাণিক যে, এই অধ্যাদেশ জারির পেছনে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত ছিল। সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল নিজেই রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হয়ে জিয়াউর রহমান ওই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল কুশীলব জিয়া-মোশতাক চক্রের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করার জন্য অবশ্যই কমিশন গঠন করতে হবে।
ঢাবি অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন প্রশ্ন রেখে বলেন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে যদি জিয়া জড়িত নাই থাকবেন, তাহলে কেন তিনি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে পঞ্চম সংশোধনীর অংশ করে হত্যাকারীদের বিচার পাকাপোক্তভাবে বন্ধ করে দিলেন? কেন তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনী ফারুক, রশিদ, ডালিমসহ বাকিদের দূতাবাসে চাকুরি দিয়ে পুরস্কৃত করলেন? এ প্রশ্নগুলো ও তার সদর্থক উত্তর বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকাকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে।
তিনি বলেন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও পরবর্তীতে জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ডের সব চেয়ে বড় সুবিধাভোগী হচ্ছেন জিয়াউর রহমান, তার দল বিএনপি, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামাত শিবির এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দল ফ্রীডম পার্টি।
What's Your Reaction?






