সরকারি চাকুরি পাওয়ার জন্য কি এখন সবাইকে সার্টিফিকেট পোড়াতে হবে!
![সরকারি চাকুরি পাওয়ার জন্য কি এখন সবাইকে সার্টিফিকেট পোড়াতে হবে!](https://banglamirror.net/uploads/images/202305/image_870x_6474ec02170b4.jpg)
ভালোবাসা এমন এক কঠিন জিনিস যা মানুষ কে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়। মানুষের ভিতর ভেঙ্গে যায় যেন ঝড়ের দিনে গাছের ভাঙ্গা ডালপালা। মরা নদীর মত শুকিয়ে যায় বুকের নদী।
হেলেনের জন্য ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছিলো, যুক্তরাজ্যের অষ্টম এডওয়ার্ড তো তার রাজত্ব ত্যাগ করেছিলেন এক আমেরিকান ডিভোর্সির জন্য । কি ভয়ানক ছিলো ভালোবাসা।
মানুষ যুগ যুগ ধরে সেই ভালোবাসার গল্প বলে। ইতিহাসে এমন ভালোবাসার অনেক উদাহরন আছে। যেমন জুলিয়েট রোমিও কে বলেছিলো। অনলি ডেথ ক্যান টেক ইউ ফ্রম মি । এসব গল্প পড়ে আমরা বড় হয়েছি।
কিন্তু পুজিবাদের এই একুশ শতকে এসে বইয়ে পড়া,ভালোবাসার সাথে অনেক ভালোবাসা দেখতে পাই। যার মধ্য অন্যতম হলো শো অফ করার ভালোবাসা। যার অনেক সুবিধা আছে ,এখানে কাউকে হৃদয় দিতে হয় না। দিতে হয় না অনুভূতি কিংবা জীবন। এখানে গল্পের আড়ালে গল্প থাকে না। শুধু একটাই সহজ উদ্দেশ্য থাকে ,নিজের বড় হওয়া। যাকে সবাই নাম দেয় সেলিব্রিটি । এই সেলিব্রেটি হওয়ার জন্য পড়তে হয় না,তার জন্য থাকা দরকার টাকা,রাজনৈতিক পরিচয় অথবা নাটক বা সিনেমা করার ট্যাগ।
সমাজের মধ্যবিত্ত এগুলো দেখে ,ফেইসবুকে লাইক শেয়ার করে আর একটা চাকরির জন্য পড়ে। জ্ঞানের জন্য পড়ার কোন সু্যোগ নাই এখানে, প্রয়োজন একটা সরকারি চাকুরির। একটা চাকরি দরকার ,তাই তার হাত পা বাধা ,একটা চাকরি হয়তো তার নিজেকে ছাড়াও ,তার পরিবার বা প্রিয় মানুষ কে রক্ষা করবে। যেখানে অনেক অনেক গল্প। যে গল্পের ছবি কেউ তোলে না। না রাষ্ট্র না রাষ্ট্রের সেই তথাকথিত সেলিব্রেটিরা।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখলাম এক মেয়ে সনদ পোড়ানোর কারনে তাকে একটা চাকরি দেয়া হয়েছে। কেন দেয়া হয়েছে এই নিদির্ষ্ট একজন কে। তার সাথে তো আরো অনেকেই ছাত্রদের সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর জন্য আন্দলন করেছিলেন তাদের কি হবে। এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে?
রাস্ট্র একজনকে চাকরি দিয়ে মহৎ হতে পারে কিন্তু হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা যে চাকরির বয়স বাড়ানো জন্য যারা আন্দোলন করেছেন তাদের কথা কে ভাববে । নাকি একটা সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য যা রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী তার প্রাপ্য তার জন্য সবাইকে ফেইসবুকে এসে সার্টিফিকেট পোড়াতে হবে!
কে তাদের হতাশা দূর করবে ,রাষ্ট্র চাইলেই চাকরির বয়স বাড়ানোর জন্য একটা কমিশিন করতে পারতো, অথবা চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়াতে পারতো। কিন্তু এসব করে রাষ্ট্রের লাভ কি। কয়েক হাজার ছাত্র ছাত্রীর আন্দোলন হয়তো রাষ্ট্রের কাছে কিছুই না। কিন্তু সেই হতভাগ্যদের কথা তো কাউকে না কাউকে বলতে হবে না তারা ব্রাত্য হয়ে থাকবেন আর নির্বাচন আসলেই বিভিন্ন আশার বানী শুনবেন!
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত টানা আন্দোলন করেছেন।চাকরির বয়স নিয়ে আন্দোলন প্রায়ই পত্রিকায় চোখে পড়ে।কিন্তু এ নিয়ে সরকার বা সুশীল সমাজের কোন মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হয়না।
দুই বেলা ডাল ভাত আর একটু খোলা বাতাসে বেচে থাকার জন্য এইটুকু চাওয়া এই ছেলে-মেয়েদের। কিন্তু সরকার বা সমাজের কোন স্তর থেকে ইতিবাচক কোন সাড়া দেখতে পাই নি। সরকার উদ্যাক্তা হওয়ার জন্য বার বার উৎসাহিত করছে কিন্তু সিস্টেমের কোন চেহারা পাল্টাচ্ছে না।
৩০ বছরে ছেলে মেয়েরা যখন চাকরি পাচ্ছে ৩৫ পেলে সমস্যা কি। সরকার যে ৬০ বছর বয়সেও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে না , তাহলে সেটা কেন? করোনার কারণে প্রায় ২ বছর লস হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
১ .১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরির প্রবেশের বয়স সীমা ছিল ২৫ বছর কারণ তখন অনার্স কোর্স ছিল ৩ বছর মেয়াদী ডিগ্রি ছিল ২ বছর মেয়াদী।
২.১৯৭৩ সালে সরকারি চাকরির প্রবেশের বয়স সীমা করা হল ২৫ থেকে ২৭ বছর।
৩.১৯৯১ সালে সরকার দেখল যে বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু ৪৫ বছর থেকে বেড়ে হল ৫০ বছর তখন ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে করা হল ৩০ বছর।
৪.২০০১ সালে সরকার ৩ বছর মেয়াদী অনার্স করল ৪ বছর এবং ডিগ্রি ২ বছর মেয়াদী কোর্স করল ৩ বছরের।
৫.২০১১ সালে সরকার অবসরের বয়স সীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে করল ৫৯ বছর।
৬.১৯৯১ সালের পর আমাদের গড় আয়ু বেড়ে ৫০ থেকে ৭৪ বছর হয় মানে ২৪ বছর গড় আয়ু বাড়ে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি পায়নি।
নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা। ৪০ শতাংশ বেকারের দেশে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের নামে চাকরিরর মেয়াদ বাড়বে কিন্তু ৩০ বছরের পর আবেদন করা যাবে না ,এটা পুরোটই হিপোক্রেসি ।
যারা আন্দোলন করছে ,তারা আর কিই বা করতে পারতো। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাই শিখিয়েছ,পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পরীক্ষায় বসতে হবে।
আমরা সেই দক্ষ জনবল গড়ার মত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে পারি নি,যেখানে সহজেই উদ্যাক্তা হওয়ার জন্য ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা শেষ করে নেমে পড়েবে ,চ্যালেঞ্জ নিবে ,দেশ বা ব্যাংক তাদের পাশে দাড়াবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতা বা সিভিলি সোসাইটির এই বিষয় নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। কারন তাদের অধিকাংশের ছেলে মেয়ে দেশের বাইরে পড়াশুনা করে।
এমনকি দেশের সুপ্রীম কোর্টও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। যেসব চাকরি প্রার্থীরা অধিকারের জন্য রাস্তায় লড়ছে তারা সফল হোক। এটা তাদের অধিকার। আর এদেশের ইতিহাস বলে ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনে এদেশের মানুষ সব সময় সফল হয়েছে।
What's Your Reaction?
![like](https://banglamirror.net/assets/img/reactions/like.png)
![dislike](https://banglamirror.net/assets/img/reactions/dislike.png)
![love](https://banglamirror.net/assets/img/reactions/love.png)
![funny](https://banglamirror.net/assets/img/reactions/funny.png)
![angry](https://banglamirror.net/assets/img/reactions/angry.png)
![sad](https://banglamirror.net/assets/img/reactions/sad.png)
![wow](https://banglamirror.net/assets/img/reactions/wow.png)