কে এই মোশারফ?
বিএনপি জামায়াতের অর্থ যোগানদান ও বিভিন্ন সময় কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক নেতা ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন মোশারফ গ্রুপ নামে একটি গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার রামপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোশারফ একসময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মোশারফ হোসেনের মালিকানাধীন এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, মোশারফ টুইস্টিং অ্যান্ড নিটিং ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেড, সোনালী টুইস্টিং অ্যান্ড নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, একতা কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, নাটোর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, মোশারফ ব্রাদার্স, আসুসেম, আবীর এন্টারপ্রাইজ, হাকিম অ্যান্ড সন্স, ক্রাউন টুইস্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ।
এর আগে ২০১৮ সালে, রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার মোশাররফ হোসেনের ফ্ল্যাট থেকে র্যাবের উদ্ধার করা দশ কোটি টাকা নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়। তখন র্যাবের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নাশকতার জন্য এই টাকা বাসায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তবে টাকাগুলো কোত্থেকে আনা হয়েছে বা কোথায় পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল, তা জানতে পারেননি র্যাব কর্মকর্তারা।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার উজ জামান তখন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল—৭-৮ দিন আগে ওই বাসায় ট্রলি ব্যাগে করে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা মজুদ করা হয়েছে। এসব টাকা নাশকতার কাজে ব্যবহার করা হবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ওই বাসায় অভিযান চালাই। বাসায় এসময় মালিক ছিলেন না।’
তার স্ত্রী নাসরিন হোসেন টাকার উৎস সম্পর্কে কোনও তথ্য জানাতে পারেননি। র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা টাকাগুলো জব্দ দেখিয়ে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি। টাকার মালিক তার টাকার উৎস সম্পর্কে আদালতকে যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারলে সেখান থেকে তিনি টাকা ছাড়িয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া আমরাও অনুসন্ধান করছি টাকাগুলো কেন তিনি মজুদ করেছিলেন।’
দশ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় র্যাবের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজধানীর রমনা থানায় র্যাব-২-এর পুলিশ পরিদর্শক রুহুল কুদ্দুস বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-২-এর একটি টিম ৪১ নম্বর নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্টার্ন গার্ডেন অ্যাপার্টমেন্টের ১১ তলায় ১০০২ নম্বর ফ্ল্যাটে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা মজুদ আছে। পরে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেনের স্ত্রী নাসরিন হোসেনের কাছে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
নাসরিন আহমেদ নগদ টাকা থাকার কথা অস্বীকার করলে পরবর্তী সময়ে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ থেকে ৪টি ট্রলিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। ওই ট্রলিব্যাগগুলোর তালা খুলে ভেতর থেকে মোট ১০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, মোশারফ হোসেন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও নাশকতা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে মজুদ রেখে সন্ত্রাসীবিরোধী আইনের (সংশোধনী/২০১৩) এর ৭ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। র্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মোশারফ হোসেনের নগদ টাকা মজুদের বিষয়টি জানা গেছে। এই টাকা ব্যবসায়িক কোনও কাজের হলে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন হওয়ার কথা ছিল।
সাধারণত কোনও ব্যবসায়ী এত টাকা ট্রলিব্যাগের মাধ্যমে বাসায় এনে রাখেন না। এসব টাকা হয়তো কোথাও বা কারও কাছে হস্তান্তর বা পাঠানোর জন্য রাখা হয়েছিল। কারণ ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী নাসরিন হোসেনও এই টাকার উৎস সম্পর্কে কোনও তথ্য জানাতে পারেননি। র্যাবের বিভিন্ন অভিযানের খবর সংগ্রহের জন্য আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে সংবাদমাধ্যমে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও ১০ কোটি টাকা উদ্ধারের বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়নি।
ঘটনার দুই দিন পর বিষয়টি জানাজানি হয়। এদিকে, উদ্ধার হওয়া টাকা জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রমনা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর এসব টাকা বুঝে নেওয়ার পর আদালতের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছে রমনা থানা পুলিশ। যোগাযোগ করা হলে পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে পুরো টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছি। ঘটনাটির তদন্ত চলছে।’
What's Your Reaction?